বাংলাদেশের সবচেয়ে কম ঘনবসতি অঞ্চল হল বান্দরবান। পাহাড়, নদী, নানান জাতের পশু পাখি ও গাছ-গাছালি কি নেই এখানে। যেদিকেই তাকাবেন কেবল মনে হবে, “ ইস সারাটা জীবন যদি এখানেই কাটিয়ে দিতে পারতাম”। হয়তো তা সম্ভব না হলেও, এখানে কাটানো সময়গুলো মনে থাকবে আপনার সারা জীবন। আসুন তবে জেনে নেই বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে।
মেঘলা এবং নীলাচলঃ বান্দরবান শহর থেকে ৪.৫ কিলোমিটার দূরে এই কমপ্লেক্সে রয়েছে চিত্তবিনোদনের নানান উপকরণ। রয়েছে পাহাড়বেষ্টিত স্বচ্ছ জলের মনোরম একটি লেক। এখানে একটি মিনি সাফারী পার্ক, চিড়িয়াখানা এবং ঝুলন্ত সেতু আছে। জেলা প্রশাসন মেঘলার কাছে টাইগারপাড়ায় নীলাচল নামে পর্যটন স্পট গড়ে তুলেছে।

- বুদ্ধ ধাতু জাদিঃ বান্দরবানের সবচেয়ে আকর্ষণীও জায়গা গুলোর মধ্যে বুদ্ধ ধাতু জাদি বা স্বর্ণমন্দির একটি। বান্দরবন শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে বালাঘাটায় অবস্থিতবাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মন্দির। স্থানীয়ভাবে যা ‘”স্বর্ণমন্দির”নামে পরিচিত। স্বর্ণমন্দির বলা হলেও এটি স্বর্ণ নির্মিত নয়। মূলত সোনালী রঙের জন্যেই এটির নাম হয়েছেস্বর্ণমন্দির। বৌদ্ধমন্দিরটি ৬০ মিটার উঁচু পর্বতের শীর্ষদেশে অবস্থিত। মন্দিরটি দক্ষিণপূর্ব এশীয় স্থাপত্যশৈলীতে তৈরী করা হয়েছে এবং এখানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মূর্তিটি আছে। পাহাড়ের চূড়ায় দেবতাপুকুর নামে একটিলেক আছে।৸
- বগালেকঃ বগালেক বগাকাইন লেক নামেও পরিচিত।বান্দরবনের রুমা সদর উপজেলা থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে এই লেকটি অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত লেকটির আয়তন ১৫ একর। উপজাতিদের ছোট ছোট গ্রাম এবং পাহাড়কে পাশ কাটিয়ে বয়ে চলেছে অদ্ভুত সৌন্দর্য মণ্ডিত এই লেকটি। লেকের নীল পানি পর্যটকদের মুগ্ধ করে। শীত মৌসুমে বগালেকে পর্যটকের ভিড় উপচে পড়ে। বর্ষাকালে বগালেক এলাকায় ভ্রমন খুবই কঠিন । এর আশেপাশে বম এবং খুমি নৃগোষ্ঠীর বসবাস।এপ্রিল হতে মে মাসের মধ্যে এ লেকের পানি ঘোলাটে হয়ে যায়।
- শৈল প্রপাতঃ বান্দরবন থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে থানচি যাওয়ার পথে মিলনছড়ি নামক স্থানে চমৎকার এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সৃষ্টি এই শৈল প্রপাত। এখানে সর্বদা বহমান ঝর্ণার হিমশীতল পানি। বর্ষাকালে গেলে এ ঝর্নাতে নামার চেয়ে না নামাই ভালো। কারন তখন বিপদজনক হতে পারে। বছরের বেশীর ভাগ সময় দেশী বিদেশী পর্যটকে ভরপুর থাকে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এটার রক্ষণাবেক্ষনের দ্বায়িত্বে আছে।
- রাজবিহার এবং উজানিপাড়া বিহারঃ বৌদ্ধ মন্দিরসমূহ কিয়াং বা বিহার নামেও ডাকা হয়। জাদি পাড়ায় অবস্থিত রাজবিহার খুবই সুপরিচিত। উজানি পাড়ায় অবস্থিত উজানিপাড়া বিহারটিও উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে একটি।
- চিম্বুক পাহাড় এবং উপজাতীয় গ্রামঃ সম্পূর্ণ বান্দারবান জেলাই প্রাকৃতিক দৃশ্যে ভরপুর।
- প্রান্তিক লেকঃ যেমন সুন্দর এই লেকটি, তেমনি সুন্দর এর চারপাশের দৃশ্য। প্রান্তিক লেকের অবস্থান প্রায় ২৯ একর এলাকা নিয়ে। এ লেকের চারিপাশ বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালিতে ভরপুর এবং লেকের পাশে পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতিরপাখির আবাস। পাখির কিচির মিচির শব্দে ভরে যাবে আপনার মন। লেকের পারের গাছের শীতল ছায়া আর নির্মল বাতাস আপনার সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে।
- তাজিংডং বিজয় ও কেওক্রাডংঃ বাংলাদেশের বতমানের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং। যার উচ্চতা ১০০৩ মিটার। যা “বিজয়” বা “মদক মুয়াল” নামেও পরিচিত। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্বতশৃঙ্গ “কেওক্রাডং”। যার উচ্চতা প্রায় ৮৮৩ মিটার।

এছাড়াও উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফাইপি ঝরণা, জাদিপাই ঝরণা, মেঘলা, মিরিংজা পর্যটন,বাকলাই ঝরণা, বুদ্ধ ধাতু জাদি, পতংঝিরি ঝরণা, রাজবিহার, উজানিপারা বিহার, রিজুক ঝরণা, চিনরি ঝিরি ঝরণা, নাফাখুম, রেমাক্রি, থানচি, এবং সাংগু নদী।
আশাকরি আপনিও একদিন ঘুরে আসবেন বাংলাদেশের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত বান্দরবান থেকে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
No comments:
Post a Comment